নিজের নাম পাঁচ অক্ষরের। যতগুলো সিনেমা নির্মাণ করেছেন তাদের নামও পাঁচ অক্ষর দিয়ে। অবুঝ মন, ময়নামতি’র মতো দর্শকপ্রিয় আর বাণিজ্যসফল চলচ্চিত্র তৈরি করে রীতিমত আলোচিত কাজী জহির।
কেবল নির্মাতা নন, ছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও হল মালিকও। তার হাত ধরেই খ্যাতি পায় রাজ্জাক-কবরীর জুটি। কীর্তিমান এই নির্মাতার প্রয়াস দিবস আজ।
ময়নামতি, অবুঝ মন, মহা মিলন, কথা দিলাম, বধূ বিদায়সহ অসংখ্য কালজয়ী বাংলা সিনেমার নির্মাতা কাজী জহির। সিনেমার সোনালী যুগে কাজী জহিরকে বলা হতো রোমান্টিক পরিচালক। তার সিনেমা মানেই রোমান্সের নতুনত্ব।
কাজী জহির ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে অক্টোবর, ঢাকায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি এবং ইংরেজিতে ডাবল এম এ পাস করেন। লেখাপড়া শেষ করে তিনি, নটর ডেম কলেজে ইংরেজি বিষয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন।
ছোটবেলা থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা ছিল তাঁর । তাই একসময় কলেজের শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দিয়ে, চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত হয়ে যান কাজী জহির । ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘বন্ধন’ (উর্দু) ছবিটি নির্মানের মাধ্যমে, চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তাঁর পরিচালিত অন্যান্য ছবিসমূহ- ভাইয়া, নয়ন তারা, ময়নামতি, মধু মিলন, অবুঝ মন, বধু বিদায়, ফুলের মালা প্রভৃতি।
তিনি প্রযোজনা ও পরিবেশনা করেছেন যেসব ছবি তাঁর মধ্যে আছে- দস্যুরাণী, চাষীর মেয়ে, কথা দিলাম, আশার আলো, আকাশ পরী, নতুন বউ, স্বামীর ঘর, দ্বীপ কন্যা, রাজ কপাল, রানী চৌধুরানী, ঘরের সুখ ইত্যাদি।
প্রযোজনা, পরিচালনা, পরিবেশনার পাশাপাশি তিনি একজন প্রদর্শকও ছিলেন। পুরান ঢাকায় ‘চিত্রামহল’ নামে তাঁর একটি সিনেমা হল আছে। ঢাকার পুরনো সিনেমা হলগুলোর মধ্যে ‘চিত্রা মহল’ অন্যতম। কাজী জহির একসময় প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সভাপতিও ছিলেন ।
ব্যক্তিজীবনে কাজী জহির ৬০-এর দশকের শেষের দিকে, নায়িকা চিত্রা সিনহা’র সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পরে ‘চিত্রা সিনহা’ হন, চিত্রা জহির। তাদের দুই মেয়ে এক ছেলে- সাগর, ঝিনুক ও শাপলা। ছেলে সাগর জহির, চলচ্চিত্র প্রযোজনার সাথে যুক্ত আছেন।
পরিচ্ছন্ন সামাজিক গল্প প্রধান ছবির সফল পরিচালক হিসেবে কাজী জহির-এর খ্যাতি অপরিসীম। সুস্থ-বিনোদনের, নিটোল প্রেমের ‘রোমান্টিক মুভি’ নির্মানেরও তিনি অগ্রপথিক। ত্রিভুজ প্রেমের গল্পের মাধ্যমে সিনেমাদর্শকদের, আনন্দ-বেদনার কাব্যে বিমোহিত করার আশ্চার্য রকমের প্রতিভা ছিল তাঁর। তারকাবহুল চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী জহির-এর নামে একসময়ে প্রতিটি সিনেমা হলে দর্শকদের ঢল নামত ।
বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি যুগের অনেক কালজয়ী ছবির নিপুণ কারিগর । দর্শকনন্দিত বহু বাণিজ্যসফল চলচ্চিত্রের মেধাবী পরিচালক । জননন্দিত একজন কৃতিমান চলচ্চিত্রকার তিনি। ১৯৯২ সালের ২০শে অক্টোবর মারা যান এই কৃতি নির্মাতা। বাংলা চলচ্চিত্রের মহিরূহব্যক্তিত্ব কাজী জহির, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন অনন্তকাল ।