দেশের প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব তিনি। সোনালি যুগের সিনেমার নায়ক ছিলেন। প্রথম সিনেমা ‘ধারাপাত’ এ নায়ক হয়ে আলোচনায় আসেন ৬০ এর দশকে। এরপর অনেকগুলো সিনেমায় নায়ক হয়ে অভিনয় করেছেন।
টেলিভিশন নাটকে রয়েছে তার বিশাল অবদান। টানা ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে টিভি নাটকে অভিনয় করছেন তিনি। মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করেছেন এক সময়। এছাড়াও, অসংখ্য বেতার নাটকেও অভিনয় করেছেন। দেশের মুক্তিযুদ্ধসহ নানা সংগ্রামে, সংকটে তিনি ছিলেন ন্যায় আর মুক্তির পক্ষে একজন চৌকস সংগঠক। তিনি সবার প্রিয় ও শ্রদ্ধ্বেয় সৈয়দ হাসান ইমাম। আজ ৮৭তম জন্মদিন তার। নানা সাফল্যে পার করে দিলেন জীবনের ৮৬টি বসন্ত।
১৯৩৫ সালের ২৭ জুলাই ভারতের বর্ধমানে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সেখানেই কাটে তার শৈশব। ১৯৫০ সালে কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানের এক নাটিকায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু হয় সৈয়দ হাসান ইমামের।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এ শিল্পী সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সৈয়দ হাসান ইমাম ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় জহির রায়হানকে সভাপতি ও হাসান ইমামকে সাধারণ সম্পাদক করে মুজিব নগরে চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলী সমিতি গঠন করা হয়, যাদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র দলিল ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নির্মিত হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে নানা জায়গায় গিয়েছেন। সাংস্কৃতিক চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে সম্প্রীতি ও মৈত্রী স্থাপনের কাজ করেছেন। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ তার জীবনের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনেরও অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব তিনি। সৈয়দ হাসান ইমাম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদকসহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার।
তাঁর প্রথম দিকের ছবির মধ্যে রাজা এল শহরে, শীত বিকেল, জানাজানি, ধারাপাত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। হাসান ইমাম টেলিভিশন নাট্যকার, নাট্যশিল্পী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন সুদীর্ঘ ৩৮ বছর যাবৎ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা চক্রান্তের ওপর রচিত আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’ পরিচালনার কাজেও তিনি নিয়োজিত ছিলেন।