গানের আঙিনায় সবাই তাকে ‘শচীন কর্তা’ বলে ডাকেন সম্মান করে। তার হাত ধরে যেমন এসেছে অসংখ্য কালজয়ী গান তেমনি তিনি গড়ে তুলেছেন এই উপমহাদেশের অনেক বিখ্যাত গায়ক, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালককে। ভারতীয় সংগীতে তিনি স্রষ্টার মতো। আজ শচীন দেব বর্মনের জন্মদিন। এই কিংবদন্তির এবার ১১৫তম জন্ম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। শচীন দেব বর্মণের জন্ম ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কুমিল্লায়। তিনি ত্রিপুরার চন্দ্রবংশীয় রাজ পরিবারের সন্তান। ১৯২০ সালে কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। এরপর ১৯২২ সালে ওই কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ১৯২৫ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. পাশ করেন তিনি। বাবা নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মণের কাছে প্রথম সংগীতে শিক্ষা নেন।
এরপর তিনি ১৯৩২ সাল থেকে কলকাতা বেতার কেন্দ্রে গান গাওয়া শুরু করেন এবং অতি দ্রুত লোকজ এবং ধ্রুপদী সংগীতের জনপ্রিয় মুখ হয়ে ওঠেন। ১৯৩৪ সালে তিনি সমগ্র ভারত গানের সম্মেলনে যোগ দেন এবং সেখানে তিনি একটি গান পরিবেশন করে সকলের দৃষ্টি কাড়েন। এর পরের বছরই তিনি কলকাতা সঙ্গিত সম্মেলনে স্বর্ণপদক জিতেন। শুরু হয় শচীন দেব বর্মনের রাজকীয় উত্থান। শচীন দেব বর্মণ তার সংগীত জীবনে অসংখ্য গানের সুর করেছেন, যার অধিকাংশ গানই লতা মঙ্গেশকর, মান্না দে, কিশোর কুমার, মো. রফি ও আশা ভোসলের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের গাওয়া। তিনি প্রায় অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনাও করেছেন। লোকজ ও রাগ সংগীতের সংমিশ্রণে সংগীত ভুবনে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন শচীন দেব বর্মন।
তার কালজয়ী গানের মধ্যে ‘কে যাস রে ভাটির গাঙ বাইয়া’, ‘রঙ্গিলা রঙ্গিলা’, ‘আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল’, ‘ঘাটে লাগাইয়া ডিঙা’, ‘বাঁশি শুনে আর কাজ নাই’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে শচীন দেব বর্মন জয় করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, পদ্মশ্রী, ফিল্মফেয়ার এশিয়ান ফিল্ম সোসাইটি পুরস্কারসহ বহু সন্মাননা। ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর মুম্বাইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সংগীতের এই কিংবদন্তি।