‘মানুষ’ সে তো পরশমণি ভাই, আমি আজো মানুষ খুঁজি তাই,মানুষ কবিতার কবি গোলাম সামদানী কোরায়শী এভাবেই মানুষের গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন । তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক,প্রগতিশীল ও সংস্কৃতিমনা । তার অবদান অসামান্য। বরেণ্য বুদ্ধিজীবী গোলাম সামদানী কোরায়শীর আজ প্রয়ান দিবস । ১৯৯১ সালের ১১ অক্টোবর তিনি ময়মনসিংহের আকুয়াতে মৃত্যুবরণ করেন।
গোলাম সামদানী কোরায়শী ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ৫ এপ্রিল বর্তমান নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়ার কাউরাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলভী বাবু শেখ আবু আছল মোঃ আঃ করিম কোরায়শী এবং মাতার নাম আলতাফুন্নেসা।
গোলাম সামদানী কোরায়শী’র কর্ম জীবন এক বহুমুখী বিচিত্র অভিজ্ঞতার সমাহার। আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে তিনি ৩ বছর ধরে রাখাল হিসেবে ছিলেন। তারপর ধানীখোলা বাজার, ঈদগাহ্ মাঠ মসজিদের ইমাম ছিলেন। তিনি ১৯৫৫ সালে ধানীখোলা হাই মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লার সম্পাদনা সহকারী, পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান প্রকল্প ও পান্ডুলিপি ও সংকলন বিভাগ, বাংলা একাডেমীতে কাজ করেন। ১৯৬৮-৯১ সালে তিনি ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। অধ্যাপক গোলাম সামদানী কোরায়শী অসংখ্য রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। তার মধ্যে তিনি সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ময়মনসিংহ সাহিত্য পরিষদ, বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ময়মনসিংহ শাখা ও সহ-সভাপতি হিসেবে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাব, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী (ময়মনসিংহ) এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মাদ্রাসায়ে আলীয়া, বাংলা সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সংগঠনের আহ্বায়ক, উপদেষ্টা ও সদস্য ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সিনেট সদস্য, বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য ছিলেন।
সাহিত্যে অধ্যাপক গোলাম সামদানী কোরায়শী’র বিশাল ভান্ডার বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।। তাঁর বিচিত্র বৈচিত্রের সাহিত্য দর্শন যে কোনো সাহিত্য প্রেমিককে আকৃষ্ট করতে সক্ষম। তাঁর মৌলিক রচনার পাশাপাশি অনুবাদ ও সম্পাদনার পরিমাণও বিশাল। তার লিখতি উপন্যাসঃ ষষ্ঠীমায়া (সেমেটিক মিথলজী ভিত্তিক রচনা, শুরু ১৯৭৯ অসম্পূর্ণ) স্বর্গীয় অশ্রু, পুত্রোৎসর্গ, মহাপ্লাবন, চন্দ্রাতপ এগুলো তাঁর সেমেটিক মিথলজী ভিত্তিক রচনা। ‘প্রদীপের নীচে’ মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক (রচনা শুরু ১৯৮৩ – অসম্পূর্ণ) ‘দেব না জানন্তি’ নাগরিক উপন্যাস, ‘রূপ ও রূপা’ পারিবারিক উপন্যাস (অসম্পূর্ণ)। এছাড়া ‘সংলাপ’ সম্পূর্ণ সংলাপে রচিত ও ‘কামিনী’ উপাখ্যান।
গল্প ও গল্প সংকলনঃ শ্রী গোলের আত্মকাহিনী প্রথম গদ্য রচনা, লেখার দোকান, কালকেতু উপাখ্যান, কারূণের উট, শাদ্দাদের বেহেস্ত, কাল নাগিনী, কোরবাণী, দুর্ভিক্ষ, কল্পনা ও বাস্তব, এক যে ছিল কুল গাছ, একুশের কড়চা, কান্না, শয়তানের দোকন, জ্ঞানের ঘাট, বাঁশী, জায়দার বাপের বেহেস্ত, হজ্জ্ব, অভিনেত্রী, ভাগ্যরেখা, রক্ত চোষার ফরিয়াদ, থার্ড ক্লাশ, বিসমিল্লাহ, বিশ্বাসঘাতকতা, সাধু, দাদা, আদি, অভিসার, নরম গরম, দুই ভাই, দুই বোন, দুই মা, দুই বন্ধু, গল্প শুনো, মেঘলা রাতের কাব্য, বুড়া ঘুমালো পাড়া জুরালো, তিন দিন তিন রাত প্রভৃতি। নাটকঃ টুপিচোর, আমাদের দেশ (নাটিকা), গাধার কলজে, সাতটি নক্শা, সাপের ছোবল, উটের মাংস, আরও ৪টি। শিয়ালের সাফাই, নাটিকা, সবুজ পাতা(এ তিনটি শিশুতোষ নাটক) ক্ষুধিত সিংহাসন, হেমলক (নাটিকা)। কবিতা ও কবিতা সংকলনঃ খেয়ালের ঝুলি, দূর্ঘটনা, উটকোর জিভ, বাদশাজাদা ও গল্পিকা (কিশোর কবিতা সংকলন), মানুষ (১২টি সনেটের সংকলন)। তাঁর কৃতকর্মের অবদানস্বরূপ অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার (১৯৯০) ২০১৭ সালে সাহিত্যে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরষ্কার পেয়েছেন গোলাম সামদানী কোরায়শী ।