মহাকালের চেনা পথ ধরে প্রতিবছর বাইশে শ্রাবণ আসে। বিশ্বব্যাপী রবিভক্তদের কাছে বাইশে শ্রাবণ দিনটি শোকের, শূন্যতার। রবীন্দ্র কাব্যসাহিত্যের বিশাল একটি অংশে যে পরমার্থের সন্ধান করেছিলেন তিনি, সেই পরমার্থের সঙ্গেই লীন হয়েছিলেন এদিন।‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে/ মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।‘ তবু জাগতিক নিয়মে বর্ষা প্রিয় রবীন্দ্রনাথের পরলোক যাত্রা এমনই এক শ্রাবণ দিনে। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে জীবনপ্রদীপ নির্বাপিত হয়েছিল তাঁর।
কবিগুরুর প্রিয় ঋতু ছিল বর্ষা। অজস্র রচনায় বাংলার বর্ষাকে তিনি অনিন্দ্যসৌন্দর্যে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। বৃষ্টির অজস্র জলধারায় পরিপুষ্ট তাঁর বিচিত্র রচনাসম্ভার। এই বর্ষা ঋতুতেই চিরবিদায় নেন তিনি।আধুনিক বাঙালির রুচির নির্মাতা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রায় একক প্রতিভায় বাংলা সাহিত্যকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদাপূর্ণ আসনে। কাব্য, সংগীত, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনিসহ সাহিত্যের প্রতিটি শাখা তাঁর প্রতিভার স্পর্শে দীপ্তিমান হয়ে উঠেছিল।
১৮৭৮ খ্রীষ্টাব্দে তার প্রথম বই ‘ কবিকাহিনী ’ প্রকাশিত হয় । তারপর একে একে প্রকাশিত হতে থাকে সন্ধ্যাসঙ্গীত , প্রভাত সঙ্গীত , ছবি ও গান , কড়ি ও কোমল , মানসী , সোনার তরী কাব্যসমূহ । তারপর বের হলো চিত্রা , চৈতালী , কণিকা , কল্পনা , কথা ও কাহিনী , নৈবেদ্য , খেয়া , গীতাঞ্জলি , গীতালি ইত্যাদি । শুধু কাব্যই নয় , নাটক , প্রবন্ধ , গল্প , উপন্যাস , রসরচনা ,সমালোচনা, রূপক নাটক , শিশুসাহিত্য , বিজ্ঞান , সমাজতত্ব , শিক্ষাতত্ব , সঙ্গীত , স্কুলপাঠ্য , ভ্রমণকাহিনী , সাহিত্য ও শিল্পের প্রায় সব ক্ষেতেই তার স্বচ্ছন্দ বিচরনের ফলে যোগফল হলো বাংলা সাহিত্যের বর্তমান চরম উৎকর্ষ সাধন ও উন্নতি । বাঙালির হূদয়ানুভূতি ও অভিব্যক্তির সার্থক প্রকাশ ঘটেছে তাঁর বিপুল রচনায়। তাঁর বৈচিত্র্যময় রচনাসম্ভার মহৎ মানবিক আবেদনের মহিমায় হয়ে উঠেছে কালজয়ী।
১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি হিসেবে তিনি লাভ করেন নোবেল পুরস্কার। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি গভীর আগ্রহে চিত্রকলা চর্চা শুরু করেন। প্রায় দু’হাজারের মতো ছবিও এঁকেছিলেন । তাঁর এসব কাজ ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পকলায় ভিন্ন মাত্রা সংযোজন করেছে। সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি সমাজসংস্কার, শিক্ষাবিস্তার, কৃষি উন্নয়নসহ বিভিন্ন কর্মে নিজেকে জীবনব্যাপী সক্রিয় রেখে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি। তাঁর কর্ম, চিন্তা বাঙালির সব আন্দোলন-সংগ্রাম ও অগ্রযাত্রায় অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে। তাঁর গান আমাদের জাতীয় সংগীত। পৃথিবীর বুকে একজনই রবীন্দ্রনাথ ছিলেন যিনি তিনটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা । প্রতিটি বাঙালির শরীর মন শিহরিত হয়ে উঠে যখন আমরা গেয়ে উঠি আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালোবাসি ,