উপমহাদেশের প্রখ্যাত গীতিকার ও সংগীত সাধক গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। বাংলাভাষার কবি ও গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। বাংলা সংগীত ভুবনে এক অসাধারণ স্রষ্টা ছিলেন তিনি। তাঁর অসংখ্য অমর সৃষ্টি আমাদের সংগীতকে করেছে সমৃদ্ধ। বরেণ্য গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার প্রায় দশ বছর ক্যানসারের সাথে যুদ্ধ করে ১৯৮৬ সালের ২০ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’, ‘এই রাত তোমার আমার’,‘ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে’,‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ সহ নানা অমর গানের স্রষ্টা গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ১৯২৪ (মতান্তরে ১৯২৫) সালের ৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে বাংলা ছায়াছবি ও আধুনিক গানের জগতকে যাঁরা মাতিয়ে রেখেছিলেন তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম একজন। বাংলা ছবির গানের স্বর্ণযুগ বলা হয় গত শতাব্দীর পাঁচ, ছয়ের দশককে। সেই গান এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে, দোলা দেয় হৃদয়ে। একদিকে, চলচ্চিত্রের গান, অন্যদিকে মাঠ-ময়দানে গণ আন্দোলনের গানও আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল গোটা বাংলায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের সহায়তার জন্য। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী পরিষদের শপথ অনুষ্ঠানে বাজানো হয় তাঁরই লেখা সেই বিখ্যাত গানটি, ‘শোন একটি মজিবরের কণ্ঠ থেকে লক্ষ মজিবরের কণ্ঠে সুরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি, আকাশে বাতাসে ওঠে রণি; বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ…।’ তার লেখা এই গান একাত্তরের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে লক্ষ প্রাণে শিহরণ বইয়ে দিত।
অনুপ্রেরণা যোগাত মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিপাগল বাঙালির হৃদয়ে। দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন।
বিখ্যাত সব কালজয়ী গানের অমর স্রষ্টা গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের গান গুলো হলো-আমার গানের স্বরলিপি,গানে মোর ইন্দ্রধনু,মাগো, ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে, বাঁশি শুনে আর কাজ নাই সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি ,ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে ,এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায় এ কী বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু , এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন , কেন দূরে থাকো শুধু আড়াল রাখো কে তুমি কে তুমি , আমায় ডাকো , এই পথ যদি না শেষ হয় , আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে , কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই , শোন একটি মজিবরের কণ্ঠ থেকে লক্ষ মজিবরের কণ্ঠে সুরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি, আকাশে বাতাসে ওঠে রণি; বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ , প্রেম একবার এসেছিল নীরবে , এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো , কত দূরে আর , এমন দিন আসতে পারে।