সবাই এক সাথে বসে সিনেমা হলে সিনেমা দেখার যে মজা তা করোনা মহামারির জন্য স্থগিত হয়ে আছে। আরও থাকবে তিন বছর । এটা কেটে গেলেই দর্শক আবারও হলে ফিরবে। তাই, সিনেমা আবারও বড় পর্দায় ফিরবে।
শনিবার ’35 mm-The KU Movie Club’ আয়োজিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-এর সর্বশেষ প্যানেল ডিসকাশন পর্বে এমন মন্তব্য করেছেন প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ।
গতকাল শনিবার রাত ৮টায় অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয় এই ডিসকাশনটি যা চলচ্চিত্র কর্মশালা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও প্যানেল ডিশকাশনের সেগমেন্টের মাধ্যমে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-এর আয়োজন করে ক্লাবটি । শনিবার এই ফেস্টিভ্যালের সর্বশেষ প্যানেল ডিসকাশনে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব গৌতম ঘোষ এবং অনম বিশ্বাস। প্যানেল ডিসকাশনটি পরিচালনা করেন আল মুমিন খান স্নেহ।

গৌতম ঘোষ বলেন, ‘সিনেমার সবচেয়ে বড় ক্ষমতার জায়গাটা হলো, কথা ছাড়াও সিনেমা কমিউনিকেট করতে পারে। সেটাকে ভিজ্যুয়াইজ করতে পারে। এ কারণে যে কোনো ভালো আঞ্চলিক ছবি আন্তর্জাতিক হয়ে উঠতে সক্ষম। তাই আমাদের ভালো ভালো সিনেমা বানাতে হবে এবং সেটাকে ছড়িয়ে দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিনেমা হলো টাইম এন্ড স্পেসের খেলা। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ছবি বানাতে গেলে আমাকে এখন ওই অডিয়েন্সের কথা ভাবতে হবে। এটা কি মোবাইলে ফোনের পর্দায় ভালো লাগবে বা জমবে? এই ট্রানজিশনের কথাও মাথায় রাখতে হবে।’
অনম বিশ্বাস বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন সিনেমার অবস্থা প্রকৃতপক্ষে খারাপ। এটার পেছনে অনেক সোশিও-পলিটিক্যাল কারণ রয়েছে। আগে এ দেশে মধ্যবিত্তরাও সপরিবারে সিনেমা দেখতে যেত, তবে এখন আর সেটা দেখা যায় না।’
এই অনুষ্ঠানের গোলটেবিল আলোচনার বিশেষ দুই পর্বের কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে শিক্ষার্থী ভিত্তিক চলচ্চিত্র আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করেন ইউএল্যাব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। এর দ্বিতীয় পর্বে শিক্ষার্থী অনুদানে নির্মিত ‘মেরু দ্বন্দ্ব’ শর্টফিল্মের ডিরেক্টর, সহ-পরিচালক এবং প্রোডাকশন ডিজাইনার উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ‘মেরু দ্বন্দ্ব’ তৈরির পেছনে পুরো গল্পটা তুলে ধরেন। মূলপর্বের আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র সাংবাদিক পানোস কোজাথানাসিস, শব্দশিল্পী হরিকুমার পিল্লাই এবং জাহিদুর রহিম অঞ্জন প্রমুখ।
এ ছাড়াও, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী চিত্রগ্রাহক সুমন সরকার এবং স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা রাজিবুল হোসেন পৃথক দুটি চলচ্চিত্র কর্মশালা পরিচালনা করেন। সেই সঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র আন্দোলন ‘৩৫ মি. মি. ’ এর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে উৎসবের নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলোর প্রদর্শনীর সমাপনীর মাধ্যমে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন চলচ্চিত্র উৎসব অনলাইন পর্বের পরিসমাপ্তি ঘটে।
এই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে ওই ক্লাবের সভাপতি বলেন বহ্নিশিখা চৌধুরি বলেন, ‘৩৫ এম এম খুবই আনন্দিত এত সুন্দর একটি প্রোগ্রাম আয়োজন করতে পেরে। যে এই প্রোগ্রামের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে আমাদের অনেক সাহায্য, সহযোগিতা করেছেন। আমরা প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
উল্লেখ্য, এই উৎসবে দেশ-বিদেশের প্রায় ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করে এবং প্রায় শতাধিক শর্টফিল্ম জমা পড়ে। এই চলচ্চিত্রগুলো থেকে ৪০টি শর্টফিল্মকে মূল উৎসবের জন্য বাছাই করা হয়। উৎসবের প্রতিযোগিতা পর্বে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা নুরুল আলম আতিক, অনম বিশ্বাস, পিপলু আর খান এবং বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক কামরুল হাসান খসরু।