বাংলাদেশের রুপালি পর্দার জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার কার্যক্রম উনিশ বছর পর আবারও শুরু হলো। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেন আগামী ২০ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন।
আসামি তারিক সাঈদ মামুনের আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী বলেন, ‘ওই দিন কারাগারে থাকা সব আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জামিনে থাকা আসামিদের ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।’
এই মামলায় কারাগারে থাকা আসামি তারিক সাঈদ মামুনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তবে লেদার লিটন ওরফে হারুন অর রশীদ লিটনকে কারাগার থেকে হাজির করা হয়নি। জামিনে থাকা আসামি আদনাল সিদ্দিকী ও ফারুক আব্বাসীর পক্ষে সময়ের আবেদন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল সময় মঞ্জুর করেন।

এ ছাড়া অন্য জামিন প্রাপ্ত তিন আসামি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজিজ মো. ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্প ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও সেলিম খানের পক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেননি আইনজীবীরা। বাকি দুই আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় ওরফে বোতল চৌধুরী এই মামলায় পলাতক রয়েছেন। যদিও ইমন অন্য মামলায় কারাগারে রয়েছেন।
এই মামলায় ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়। এরপর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০০৩ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ পাঠানো হয়। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো বেআইনি হয়েছে এই দাবি করে ওই আইনের দুটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে আদনান সিদ্দিকী হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন (রিট নম্বর ৭০৫৩ / ২০০৩)। ওই রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরের আদেশ কেন বেআইনি হবে না তা জানাতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। একই সঙ্গে তিন মাসের জন্য মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত করেন। পরে ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। সেই থেকে এই মামলার বিচার স্থগিত থাকে। কোনো স্বাক্ষীর স্বাক্ষই আর গ্রহণ করা হয়নি।

একটানা ১২ বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকার পর ২০১৫ সালে আদনান সিদ্দিকীর দায়ের করা রিট আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর বেঞ্চ ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট রায় দেন। রায়ে ইতিপূর্বে দায়ের করা রুল খারিজ করে দেন। হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার করেন। মামলার বিচার কার্যক্রম চলতে আইনত আর কোনো বাধা থাকে না এই আদেশের পর। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওই রায় ও হাইকোর্টের আদেশ আর বিচারিক ট্রাইব্যুনালে পৌঁছেনি। গায়েব হয়ে যায় হাইকোর্টের আদেশের নথি।
দৈনিক আজকের পত্রিকা বিষয়টি অনুসন্ধান করে গত ২৩ জানুয়ারি ‘নায়ক খুনের মামলা গুম’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবু জোবায়ের হোসাইন সজিব সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে রিট আবেদন করেন।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে নথি খুঁজে বের করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন। এরপর নথি বের হয়ে যায় এবং সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা স্থগিত করা নিয়ে যে রিট আবেদন করা হয়েছিল সেই রুল খারিজের আদেশও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে যায়। গত মঙ্গলবার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার আসামিদের হাজিরার জন্য দিন ধার্য করেন।

নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় চিত্র নায়ককে হত্যা করা হয় ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাত তিনটার দিকে। সোহেল চৌধুরী বনানীর পুরাতন ডিওএইচএসের বাসা থেকে তাঁর গাড়ি চালক সেলিম, সঙ্গী কালাম ও অন্য একজনকে সঙ্গে নিয়ে বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবে যান। ক্লাবের কলাপসিবল গেটের কাছে গেলে কয়েকজন সন্ত্রাসী তাদের গতিরোধ করে। গুলি করে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করে।
এ ঘটনায় ওই দিনই সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি তদন্ত করে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই অভিযোগপত্র দাখিল করেন ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার কাশেম বেপারী। অভিযোগপত্রে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ অন্যদের আসামি করা হয়।